গতকাল নারীদের চেহারা খোলা রাখার ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের অবস্থান পরিষ্কার করে একটি প্রবন্ধ লিখেছি। সেখানে দেখিয়েছি যে, আবু হানিফা, আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ, তাহাবি সবাই সুরা নুরের ৩১ নং আয়াত "তোমাদের সৌন্দর্য উন্মোচন করবে না প্রকাশ্যমান যা তা ব্যাতীত" এর তাফসিরে বলেছেন, প্রকাশ্যমান সৌন্দর্য হল চেহারা এবং হাতের মুঠো। আরো দেখিয়েছি যে, এই তাফসিরের ভিত্তিতে হানাফি ইমামগণ নারীদের চেহারার দিকে তাকানোর অনুমতি পরপুরুষকে দিয়েছেন।
তো আমার এই লেখা পড়ে জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছেন "পুরুষ কর্তৃক নারীর চেহারা দেখা আর নারী কর্তৃক নিজের চেহারা প্রকাশ করা এক জিনিস?" মানে তিনি বোঝাতে চাচ্ছেন, হানাফি ইমামরা পুরুষ কর্তৃক নারীর খোলা চেহারার দেখার অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু নারী কর্তৃক নিজের চেহারা খোলা রাখার অনুমতি দেন নি। আমি ঠিক বুঝি না, তাদের চিন্তাভাবনার এই দূর্বলতা কতটা তাদের উসুলে ফিকহে দূর্বলতার কারণে, আর কতটা তাদের মিসোজিনিস্টিক জগতদর্শনের কারণে!
উসুলে ফিকহের বেসিক নিয়ে আলাপ করি চলুন। হানাফি মাযহাবের বিখ্যাত উসুলের গ্রন্থ "উসুলে বাযদাবি" তে কোরআন-হাদিসের টেক্সট বিশ্লেষণ করার চারটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমাম বাযদাবি বলেন,
بابُ وُجُوهِ) (الوُقُوفِ عَلى) (أحْكامِ النَّظْمِ) وهُوَ القِسْمُ الرّابِعُ وذَلِكَ أرْبَعَةُ أوْجُهٍ: الوُقُوفُ بِعِبارَتِهِ وإشارَتِهِ ودَلالَتِهِ واقْتِضائِهِ.
أمّا الأوَّلُ فَما سِيقَ الكَلامُ لَهُ وأُرِيدَ بِهِ القَصْدُ أوْ الإشارَةُ ما ثَبَتَ بِنَظْمِهِ مِثْلُ الأوَّلِ، إلّا أنَّهُ غَيْرُ مَقْصُودٍ ولا سِيقَ الكَلامُ لَهُ وهُما سَواءٌ فِي إيجابِ الحُكْمِ، إلّا أنَّ الأوَّلَ أحَقُّ عِنْدَ التَّعارُضِ
وأمّا دَلالَةُ النَّصِّ فَما ثَبَتَ بِمَعْنى النَّظَرِ لُغَةً وإنَّما نَعْنِي بِهَذا ما ظَهَرَ ومِن مَعْنى الكَلامِ لُغَةً وهُوَ المَقْصُودُ بِظاهِرِ اللُّغَةِ والثّابِتُ بِهَذا القِسْمِ مِثْلُ الثّابِتِ بِالإشارَةِ والعِبارَةِ، إلّا أنَّهُ عِنْدَ التَّعارُضِ دُونَ الإشارَةِ
وأمّا المُقْتَضِي فَزِيادَةٌ عَلى النَّصِّ ثَبَتَ شَرْطًا لِصِحَّةِ المَنصُوصِ عَلَيْهِ لَمّا لَمْ يَسْتَغْنِ عَنْهُ وجَبَ تَقْدِيمُهُ لِتَصْحِيحِ المَنصُوصِ عَلَيْهِ فَقَدْ اقْتَضاهُ النَّصُّ
নযম (টেক্সট) থেকে অর্থ উদ্ধারের চারটি উপায় আছে।
১. মূল পাঠ থেকে (ইবারাতুন নস), ২. ইঙ্গিত থেকে (ইশারাতুন নস), ৩. নির্দেশনা থেকে (দালালাতুন নস), ৪. চাহিদা বা দাবি থেকে (মুকতাদান নস)।
প্রথম প্রকারের ব্যাখ্যা হল - এটা এমন অর্থ যা বোঝাতে বক্তব্যটি এসেছে এবং টেক্সটের উদ্দেশ্যও তাই। দ্বিতীয় প্রকার হল - যা টেক্সট থেকে প্রথম প্রকারের মতই বোঝা যায়, কিন্তু এই অর্থ সরাসরি টেক্সটের উদ্দেশ্য নয় এবং এটা বোঝাতে বক্তব্য আসে নি। উভয় প্রকার কোন বিধানের বাধ্যবাধতার ক্ষেত্রে সমান, তবে কখনো বিরোধ দেখা গেলে প্রথম প্রকারকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
নির্দেশনা থেকে প্রাপ্ত অর্থ হল এমন অর্থ যা টেক্সট থেকে ভাষাগত দিক থেকে চিন্তার মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়। অর্থাৎ বক্তব্যের যে অর্থ ভাষার বাহ্যিক ব্যবহার থেকে বোঝা যায় এবং ভাষার বাহ্যিক উদ্দেশ্যও তাই নির্দেশ করে। নির্দেশনা থেকে যা সাব্যস্ত হয়, তা মূল পাঠ ও ইঙ্গিত থেকে সাব্যস্ত বিষয়ের অনুরূপ। কিন্তু বিরোধের ক্ষেত্রে এর স্থান ইঙ্গিতের নিচে।
চাহিদা বা দাবি থেকে প্রাপ্ত অর্থ হল তা, যা টেক্সট থেকে বহির্ভূত কিন্তু এটা টেক্সটের শুদ্ধতার জন্য শর্ত। অর্থাৎ এটা এমন অর্থ যার উপর টেক্সটের বক্তব্যের শুদ্ধতা নির্ভরশীল। আর তাই একে টেক্সটের দাবি বা চাহিদা বলা হয়।
এবার আমি প্রশ্ন করি, আবু হানিফা যে কোরআনের এই আয়াত থেকে পুরুষের জন্য মেয়েদের চেহারা দেখার বৈধতার অর্থ বের করলেন, এটা কোন প্রকারে করেছেন? আয়াতের মূল পাঠ বা ইবারত থেকে? নাকি আয়াতের ইঙ্গিত থেকে?
আয়াতের মূল পাঠ আবার দেখা যাক, “নারীরা যেন যা প্রকাশ্যমান তা ব্যাতিরেকে নিজেদের সৌন্দর্য কারো কাছে উন্মোচন না করে...”
এই আয়াতের মূল পাঠে কি পরপুরুষ নারীর চেহারা দেখতে পারবে কিনা এই কথা আছে? নাকি এই অর্থ আয়াতের ইশারা থেকে আবু হানিফা বের করেছেন? আয়াতে বলা হয়েছে, চেহারা ও দুই হাতের মুঠো ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ প্রকাশ করা যাবে না। অর্থাৎ কেবল চেহারা ও দুই হাতের মুঠো প্রকাশ করা যাবে। আরো লক্ষ্যনীয় আয়াতে ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে إبداء যার অর্থ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ করা, অনিচ্ছায় প্রকাশ হয়ে যাওয়া নয়। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আয়াতের ইবারাতুন নস বা মূল পাঠ থেকে প্রাপ্ত অর্থ হচ্ছে, নারীরা পরপুরুষের সামনে চেহারা খুলতে পারবে। আর এই অর্থের শুদ্ধতা মেনে নেয়ার পর, ইশারাতুন নস বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে আবু হানিফা আয়াত থেকে অর্থ বের করেছেন যে, পরপুরুষের জন্য নারীর চেহারা দেখা জায়েজ। কারণ চেহারা প্রকাশ করতে পারার বৈধতা থাকাই ইঙ্গিত করে চেহারার দিকে তাকানোর বৈধতা রয়েছে।
আমার কওমি বন্ধুরা আবু হানিফার তাফসির মেনে আয়াতের ইশারা মেনে নিতে রাজি আছেন, কিন্তু ইবারত মেনে নিতে রাজি নন!
আচ্ছা, এবার অন্যদিক থেকে আসা যাক। আপনি বলছেন, মেয়েরা নিজ থেকে চেহারা খুলতে পারবে না। ঢেকে রাখতে হবে। আমি বলব, কেন ঢেকে রাখতে হবে? চেহারা তো হানাফি মাযহাবে আওরত না। আমার এই প্রশ্নের একমাত্র যৌক্তিক উত্তর হল, আওরত হবার কারণে ঢাকতে বলছি না, বরং সদ্দে যরিয়া হিসেবে ঢাকতে বলছি। এটাই যদি আপনার উত্তর হয়, তাহলে আপনার সাথে তো আমার কোন বিরোধ নেই। আমার প্রবন্ধেও তো আমি আনোয়ার শাহ কাশ্মিরির বক্তব্য উল্লেখ করেছি এই মর্মে। তিনি ফায়দ্বুল বারী গ্রন্থে লিখেছেন,
الزينة هي الوجه والكفان، فيجوز الكشف عند الأمن عن الفتنة على المذهب، وأفتى المتأخرون بسترها لسوء حال الناس
যিনাত হল চেহারা ও দুই হাতের মুঠো। ফিতনার আশংকা থেকে নিরাপদ থাকলে এই অঙ্গ খোলা রাখা হানাফি মাযহাব মতে জায়েয। তবে শেষ দিকের আলেমরা এগুলো ঢেকে রাখার ফতোয়া দিয়েছেন, মানুষের শোচনীয় অবস্থার কারণে।
একই কথা আপনি দুররে মুখতারেও পাবেন। আল্লামা হাসকাফি বলেন,
(وتمنع) المرأة الشابة (من كشف الوجه بين الرجال) لا لانه عورة بل (لخوف الفتنة)
যুবতী নারীদের পুরুষের সামনে চেহারা খুলতে বাঁধা দেয়া হবে, চেহারা গোপনীয় অঙ্গ এই কারণে নয়, বরং অঘটনের আশঙ্কায়।
এরপর তিনি প্রশ্ন করেছেন, “নারী বিশেষ জরুরত ছাড়া চেহারা খোলা রাখতে পারবে, এর তাসরীহ পেয়েছেন হানাফী ফিকহে?”
জরুরত ও হাজত এই দুইটি শব্দ যে, কাওয়ায়েদে ফিকহ অনুযায়ী ভিন্ন দুইটি বিষয়, তা আমার কওমি বন্ধু জানেন কিনা নিশ্চিত নই। জরুরত হল অপারগতা, হাজত হল প্রয়োজনীয়তা। উদাহরণ দিয়ে বোঝালে, লিপস্টিক কিনতে শপিং মলে যাওয়া নারীর জন্য প্রয়োজন বা হাজত, জরুরত বা অপারগতা না। যেমন: বিয়ের জন্য মেয়ে দেখে নেয়া হল হাজত, জরুরত না। কওমি বন্ধু তাসরিহ, মানে সরাসরি বক্তব্য চেয়েছেন, আমার এই উসুলি ইসতিদলালে তিনি হয়ত সন্তুষ্ট হবেন না। আচ্ছা, এই নিন সরাসরি বক্তব্য।
নারীর চেহারা খোলা রাখা বিষয়ে হানাফি মাযহাবের সুস্পষ্ট অবস্থান
শামসুল আইম্মাহ সারাখসি আল মাবসুত গ্রন্থে বলেন,
فَأمّا النَّظَرُ إلى الأجْنَبِيّاتِ فَنَقُولُ: يُباحُ النَّظَرُ إلى مَوْضِعِ الزِّينَةِ الظّاهِرَةِ مِنهُنَّ دُونَ الباطِنَةِ لِقَوْلِهِ تَعالى ﴿ولا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إلّا ما ظَهَرَ مِنها﴾ [النور ٣١] وقالَ عَلِيٌّ وابْنُ عَبّاسٍ : ما ظَهَرَ مِنها الكُحْلُ والخاتَمُ وقالَتْ عائِشَةُ : إحْدى عَيْنَيْها وقالَ ابْنُ مَسْعُودٍ : خُفُّها ومِلاءَتُها
পরনারীর দিকে তাকানোর ব্যাপারে আমরা বলি, প্রকাশ্য সৌন্দর্যের জায়গাগুলোর দিকে তাকানো যাবে, অভ্যন্তরীন সৌন্দর্যের দিকে না। কারণ আল্লাহ বলেন, “তারা যেন প্রকাশ্যমান সৌন্দর্য ব্যাতীত কিছু উন্মোচন না করে” (নুর ৩১) আলী এবং ইবনে আব্বাস বলেছেন, প্রকাশ্যমান সৌন্দর্য হচ্ছে কাজল ও আংটি। আয়েশা বলেছেন, এক চোখ। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ বলেছেন, তার মোজা ও চাঁদর।
واسْتَدَلَّ فِي ذَلِكَ بِقَوْلِهِ - ﷺ -: «النِّساءُ حَبائِلُ الشَّيْطانِ بِهِنَّ يَصِيدُ الرِّجالُ» وقالَ - ﷺ -: «ما تَرَكْت بَعْدِي فِتْنَةً أضَرَّ عَلى الرِّجالِ مِن النِّساءِ» «وجَرى فِي مَجْلِسِهِ - ﷺ - يَوْمٌ ما خَيْرُ ما لِلرِّجالِ مِن النِّساءِ وما خَيْرُ ما لِلنِّساءِ مِن الرِّجالِ فَلَمّا رَجَعَ عَلِيٌّ إلى بَيْتِهِ أخْبَرَ فاطِمَةَ بِذَلِكَ فَقالَتْ: خَيْرُ ما لِلرِّجالِ مِن النِّساءِ أنْ لا يَراهُنَّ وخَيْرُ ما لِلنِّساءِ مِن الرِّجالِ أنْ لا يَرَيْنَهُنَّ فَلَمّا أخْبَرَ رَسُولَ اللَّهِ - ﷺ - بِذَلِكَ قالَ هِيَ بِضْعَةٌ مِنِّي» فَدَلَّ أنَّهُ لا يُباحُ النَّظَرُ إلى شَيْءٍ مِن بَدَنِها ولِأنَّ حُرْمَةَ النَّظَرِ لِخَوْفِ الفِتْنَةِ وعامَّةُ مَحاسِنِها فِي وجْهِها فَخَوْفُ الفِتْنَةِ فِي النَّظَرِ إلى وجْهِها أكْثَرُ مِنهُ إلى سائِرِ الأعْضاءِ وبِنَحْوِ هَذا تَسْتَدِلُّ عائِشَةُ - رَضِيَ اللَّهُ تَعالى عَنْها - ولَكِنَّها تَقُولُ: هِيَ لا تَجِدُ بُدًّا مِن أنْ تَمْشِيَ فِي الطَّرِيقِ فَلا بُدَّ مِن أنْ تَفْتَحَ عَيْنَها لِتُبْصِرَ الطَّرِيقَ فَيَجُوزَ لَها أنْ تَكْشِفَ إحْدى عَيْنَيْها لِهَذا الضَّرُورَةِ والثّابِتُ بِالضَّرُورَةِ لا يَعْدُو مَوْضِعَ الضَّرُورَةِ
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ এর স্বপক্ষে দলিল দিয়েছেন নবির হাদিস দিয়ে “নারীরা শয়তানের ফাঁদ”, এছাড়াও এই হাদিস “আমার পর পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না” এছাড়াও এটা — একদিন রাসুলের মজলিসে নারীর ব্যাপারে পুরুষের জন্য কী উত্তম এবং পুরুষের ব্যাপারে নারীর জন্য কী উত্তম তা নিয়ে কথা হচ্ছিল। আলী বাসায় ফিরে ফাতিমাকে এটি জানালে তিনি বললেন, নারীর ব্যাপারে পুরুষের জন্য উত্তম হল, তাদেরকে সে দেখবে না। আর পুরুষের ব্যাপারে নারীর জন্য উত্তম হল, নারী তাদেরকে দেখবে না। আলী যখন রাসুলকে এটা জানান, তিনি বললেন, ফাতিমা আমারই অংশ। সুতরাং এটা থেকে (আয়েশার যুক্তি অনুযায়ী) প্রমাণিত হয় যে, নারীর শরীরের কিছুই দেখাই যাবে না, আর দৃষ্টিপাত হারাম করা হয়েছে ফিতনার আশঙ্কায় এবং চেহারাই সকল সৌন্দর্যের কেন্দ্র, তাই সকল অঙ্গের চেয়ে চেহারার দিকে তাকানোই বড় ফিতনার কারণ। আর এই যুক্তিতেই আয়েশা আয়াতের তাফসির করেছেন। কিন্তু নারীর তো রাস্তায় না চলে কোন উপায় নেই, তাই রাস্তা দেখার জন্য তার চোখ খোলা রাখতেই হচ্ছে; আর তাই এই বিশেষ অপারগতার কারণে তার জন্য এক চোখ খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অপারগতার কারণে যা বৈধ হয়, তা অপারগতা নেই এমন স্থানে প্রযোজ্য না।
ولَكِنّا نَأْخُذُ بِقَوْلِ عَلِيٍّ وابْنِ عَبّاسٍ - رَضِيَ اللَّهُ تَعالى عَنْهُما - فَقَدْ جاءَتْ الأخْبارُ فِي الرُّخْصَةِ بِالنَّظَرِ إلى وجْهِها وكَفِّها مِن ذَلِكَ ما رُوِيَ «أنَّ امْرَأةً عَرَضَتْ نَفْسَها عَلى رَسُولِ اللَّهِ - ﷺ - فَنَظَرَ إلى وجْهِها فَلَمْ يَرَ فِيها رَغْبَةً» ولَمّا قالَ عُمَرُ فِي خُطْبَتِهِ: ألا لا تُغالُوا فِي أصْدِقَةِ النِّساءِ فَقالَتْ امْرَأةٌ سَفْعاءُ الخَدَّيْنِ: أنْتَ تَقُولُهُ بِرَأْيِك أمْ سَمِعْتَهُ مِن رَسُولِ اللَّهِ - ﷺ - فَإنّا نَجِدُ فِي كِتابِ اللَّهِ تَعالى بِخِلافِ ما تَقُولُ قالَ اللَّهُ تَعالى ﴿وآتَيْتُمْ إحْداهُنَّ قِنْطارًا فَلا تَأْخُذُوا مِنهُ شَيْئًا﴾ [النساء ٢٠] فَبَقِيَ عُمَرُ باهِتًا وقالَ: كُلُّ النّاسِ أفْقَهُ مِن عُمَرَ حَتّى النِّساءُ فِي البُيُوتِ فَذَكَرَ الرّاوِي أنَّها كانَتْ سَفْعاءَ الخَدَّيْنِ. وفِي هَذا بَيانُ أنَّها كانَتْ مُسْفِرَةً عَنْ وجْهِها «ورَأى رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ - كَفَّ امْرَأةٍ غَيْرَ مَخْضُوبٍ فَقالَ: أكَفُّ رَجُلٍ هَذا» ولَمّا ناوَلَتْ فاطِمَةُ أحَدَ ولَدَيْها بِلالًا أوْ أنَسًا قالَ أنَسٌ: رَأيْت كَفَّها كَأنَّهُ فِلْقَةُ قَمَرٍ فَدَلَّ أنَّهُ لا بَأْسَ بِالنَّظَرِ إلى الوَجْهِ والكَفِّ فالوَجْهُ مَوْضِعُ الكُحْلِ والكَفُّ مَوْضِعُ الخاتَمِ والخِضابِ وهُوَ مَعْنى قَوْله تَعالى ﴿إلّا ما ظَهَرَ مِنها﴾ [النور ٣١]
কিন্তু আমরা (হানাফি মাযহাব) এই ক্ষেত্রে আলী ও ইবনে আব্বাসের মত গ্রহণ করি। আল্লাহ উভয়ের উপর সন্তুষ্ট হউন। কেননা চেহারা ও হাতের মুঠোর দিকে তাকানোর ছাড় প্রদান করে বহু সংবাদ এসেছে। যেমনটি বর্ণনায় এসেছে, “এক নারী রাসুলের সামনে নিজেকে পেশ করল। রাসুল তার চেহারা দেখে পছন্দ করলেন না” এছাড়াও উমার খুতবা দেয়ার সময় যখন বলেছিলেন, নারীদের মোহর দেয়ার ক্ষেত্রে তোমরা বাড়াবাড়ি কোরো না। তখন তামাটে গালের এক নারী দাঁড়িয়ে বললেন, আপনি কি নিজের বিবেচনা অনুযায়ী বলছেন, না রাসুলের কাছ থেকে শুনে বলছেন? আমরা তো আল্লাহর কিতাবে আপনার কথার বিপক্ষে বক্তব্য পাচ্ছি। আল্লাহ বলেছেন, কিনতার সমান মোহরও যদি দাও, তার কিছুই ফেরত নিও না। (নিসা ২০) আর উমার এতে নির্বাক হয়ে যান। তিনি বলে ওঠেন, সবাই দেখছি উমারের চেয়ে বড় ফকিহ। এমনকি ঘরের মেয়েরা পর্যন্ত! এই ঘটনায় বর্ণনাকারী উল্লেখ করেছেন যে, নারীটির গালের বর্ণ তামাটে ছিল। আর এখান থেকে বোঝা যায়, নারীটি তার চেহারা খুলে রেখেছিল। এছাড়াও আছে, আল্লাহর রাসুল এক মেয়ের হাতে মেহেদি না দেখে বললেন, এটা কি কোন পুরুষের হাত? এছাড়াও ফাতিমা যখন তার ছেলেকে বিলাল কিংবা আনাসের কাছে দেন, তখন বিলাল অথবা আনাস বলেন, আমি ফাতিমার হাতের মুঠো দেখেছি যেন তা চাঁদের এক ফালি। সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত হল যে, চেহারা কিংবা হাতের মুঠোর দিকে তাকাতে কোন সমস্যা নেই। চেহারা হল কাজলের স্থান, হাতের মুঠো আংটি ও মেহেদির স্থান। আর এটাই “যা প্রকাশ্যমান তা বাদে” এর ব্যাখ্যা।
وخَوْفُ الفِتْنَةِ قَدْ يَكُونُ بِالنَّظَرِ إلى ثِيابِها أيْضًا قالَ القائِلُ
وما غَرَّنِي الإخْضابُ بِكَفِّها … وكُحْلٌ بِعَيْنَيْها وأثْوابُها الصُّفْرُ
ثُمَّ لا شَكَّ أنَّهُ يُباحُ النَّظَرُ إلى ثِيابِها ولا يُعْتَبَرُ خَوْفُ الفِتْنَةِ فِي ذَلِكَ فَكَذَلِكَ إلى وجْهِها وكَفِّها ورَوى الحَسَنُ بْنُ زِيادٍ عَنْ أبِي حَنِيفَةَ أنَّهُ يُباحُ النَّظَرُ إلى قَدَمِها أيْضًا وهَكَذا ذَكَرَ الطَّحاوِيُّ لِأنَّها كَما تُبْتَلى بِإبْداءِ وجْهِها فِي المُعامَلَةِ مَعَ الرِّجالِ وبِإبْداءِ كَفِّها فِي الأخْذِ والإعْطاءِ تُبْتَلى بِإبْداءِ قَدَمَيْها إذا مَشَتْ حافِيَةً أوْ مُتَنَعِّلَةً ورُبَّما لا تَجِدُ الخُفَّ فِي كُلِّ وقْتٍ وذُكِرَ فِي جامِعِ البَرامِكَةِ عَنْ أبِي يُوسُفَ أنَّهُ يُباحُ النَّظَرُ إلى ذِراعَيْها أيْضًا لِأنَّها فِي الخَبَرِ وغَسْلِ الثِّيابِ تُبْتَلى بِإبْداءِ ذِراعَيْها أيْضًا قِيلَ: وكَذَلِكَ يُباحُ النَّظَرُ إلى ثَناياها أيْضًا لِأنَّ ذَلِكَ يَبْدُو مِنها فِي التَّحَدُّثِ مَعَ الرِّجالِ وهَذا كُلُّهُ إذا لَمْ يَكُنْ النَّظَرُ عَنْ شَهْوَةٍ فَإنْ كانَ يَعْلَمُ أنَّهُ إنْ نَظَرَ اشْتَهى لَمْ يَحِلَّ لَهُ النَّظَرُ إلى شَيْءٍ مِنها لِقَوْلِهِ - ﷺ -: «مَن نَظَرَ إلى مَحاسِنِ أجْنَبِيَّةٍ عَنْ شَهْوَةٍ صُبَّ فِي عَيْنَيْهِ الآنُكُ يَوْمَ القِيامَةِ» «وقالَ لِعَلِيٍّ : لا تُتْبِعْ النَّظْرَةَ بَعْدَ النَّظْرَةِ فَإنَّ الأُولى لَك والأُخْرى عَلَيْك» يَعْنِي بِالأُخْرى أنْ يَقْصِدَها عَنْ شَهْوَةٍ.
আর ফিতনার আশঙ্কার যে কথা বলা হয়, সেটা তো নারীর পোশাক দেখেও হতে পারে। কবি বলেছেন,
“আমাকে দিশেহারা করেছে হাতের মেহেদি, চোখের কাজল ও তার হলুদ রঙের পোশাক”
এছাড়াও কোন সন্দেহ নেই যে, নারীর পোশাকের দিকে তাকানো জায়েয। আর এর বেলায় তো ফিতনার আশঙ্কা বিবেচনা করা হয় না। সুতরাং একই কথা চেহারা ও হাতের মুঠোর বেলায়। আবু হানিফার সুত্রে হাসান বিন যিয়াদ বর্ণনা করেছেন, নারীর পায়ের (কদম) দিকেও তাকানো যাবে। তাহাবী এটা উল্লেখ করেছেন। কারণ পুরুষের সাথে লেনদেনের সময় নিতে ও দিতে নারীকে যেমন হাতের মুঠো উন্মোচন করার ঝামেলা পোহাতে হয়, তেমনি তাকে কদম খোলা রাখতে হয়, খালি পায়ে হাঁটার সময় কিংবা মোজা খুঁজে না পেলে জুতা পরে চলার সময়। জামেউল বারামিকা গ্রন্থে আছে, আবু ইউসুফ নারীর বাহুর দিকে তাকানোর অনুমতিও দিয়েছেন কেননা এটি খবরের আওতায় পড়ে এবং কাপড় ধোঁয়ার সময় বাহু খোলা রাখার ঝামেলা তার আছে। এছাড়াও তার দাঁতের দিকে তাকানোও বৈধ, কারণ পুরুষের সাথে কথা বলার সময় তাকে মুখ খুলতে হয়। আর এর সবই সেক্ষেত্রে যখন পুরুষের কামভাব থাকবে না। কিন্তু যদি সে জানে যে, তাকালে তার কামভাব জাগ্রত হবে, তবে তার জন্য এসবের কিছুর দিকে তাকানো জায়েয হবে না। কেননা নবিজি বলেছেন, “নারীর সৌন্দর্যের দিকে যে কামভাব নিয়ে তাকাবে, তার চোখে কেয়ামতের দিন সীসা ঢেলে দেয়া হবে।” এছাড়াও তিনি আলীকে বলেছেন, “দৃষ্টির পর দৃষ্টি দিও না। প্রথমটি তোমার জন্য, শেষেরটি তোমার বিরুদ্ধে।” শেষেরটি বলে তিনি বুঝিয়েছেন, কামভাব নিয়ে তাকানো।
সুত্র: আল মাবসুত, ১০/১৫২-৩।
নারীর সৌন্দর্যের দিকে যে কামভাব নিয়ে তাকাবে, তার চোখে কেয়ামতের দিন সীসা ঢেলে দেয়া হবে।” এছাড়াও তিনি আলীকে বলেছেন, “দৃষ্টির পর দৃষ্টি দিও না। প্রথমটি তোমার জন্য, শেষেরটি তোমার বিরুদ্ধে।” শেষেরটি বলে তিনি বুঝিয়েছেন, কামভাব নিয়ে তাকানো।
Eita ki kono hadis? Narir shoundorjo tahole ache keno jodi kamvab i na jage?shoundorjo thakar pichone aro ojana karon ache, narir dike apni jokhon drishti den ei shounodrjo jodi apnar kamvab i na ane,tahole apnar kache to nari thakar kono meaning i hoyna.bujhate chacchi nari bishoytir mukkhota jounota i akrishto kore,,,narir shounodrjo er dike je kamvab niye takabe kothata to shialer kache murgi dewar moto…