লম্বা চুল রাখা সম্পর্কে ইমাম ইবনে আব্দুল বার আল মালেকি রহিমাহুল্লাহ তার মুয়াত্তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ আত তামহীদ এ বলেন,
قال أبو عمر: صار أهلُ عصرِنا لا يَحبِسُ الشَّعَرَ منهم إلّا الجُنْدُ عندَنا، لهم الجُمَمُ والوَفَراتُ، وأضرَب عنها أهلُ الصَّلاح والسَّترِ والعلم، حتى صار ذلك علامة مِن علاماتِهم، وصارت الجُمَمُ اليومَ عندَنا تكادُ تكونُ علامةَ السُّفَهاءِ. وقد رُويَ عنِ النبيِّ ﷺ أنّه قال: «مَن تَشَبَّهَ بقوم فهو منهم» . أو: «حُشِر معهم» . فقيل: مَن تَشَبَّه بهم في أفعالهم. وقيل: مَن تَشَبَّه بهم في هيئاتِهم. وحَسبُكَ بهذا، فهو مُجمَلٌ في القتداء بهَدْي الصَّالحين على أيِّ حالٍ كانوا. والشَّعَرُ والحلْقُ لا يُغنيانِ يومَ القيامةِ شيئًا، وإنَّما المجازاةُ على النِّياتِ والأعمال، فرُبَّ محلوقٍ خيرٌ مِن ذي شَعَر، ورُبَّ ذي شَعَرٍ رَجُلًا صالحًا. وقد كان التَّختُّمُ في اليمينِ مُباحًا حسَنًا؛ لأنّه قد تختَّم به جماعةٌ من السَّلَفِ في اليمينِ، كما تختَّم منهم جماعةٌ في الشِّمال، وقد رُويَ عن النبيِّ ﷺ الوجهان جميعًا (٢)، فلمَّا غَلَبَتِ الرَّوافضُ على التَّختُّم في اليمينِ ولم يخلِطُوا به غيرَه، كرهه العلماءُ؛ مُنابذةً لهم، وكراهيةً للتَّشبُّهِ بهم؛ لا أنّه حرامٌ، ولا أنّه مكروهٌ، وبالله التوفيق.
ইমাম আবু উমার (ইবনে আব্দুল বার) বলেন, বর্তমান সময়ে চুল সীমাবদ্ধ না রাখার অভ্যাসটি কেবল সৈনিকদের মাঝে পাওয়া যায়, তাদের জুম্মাহ (কাঁধ পর্যন্ত চুল) এবং ওয়াফরা (কানের লতি পর্যন্ত চুল) থাকে। নেককার, পরহেজগার ও আহলে ইলম এই অভ্যাস থেকে সরে এসেছেন, ফলে এটা এখন তাদের একক চিহ্নে পরিণত হয়েছে এবং কাঁধ পর্যন্ত চুল রাখা আমাদের এখানে বখাটে চিহ্নিত করার আলামতে পরিণত হয়েছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, "যে কোন দলের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে" কিংবা "তাদের সাথে হাশর হবে"। সাদৃশ্য গ্রহণের অর্থ হিসেবে বলা হয় তাদের কাজেকর্মে সাদৃশ্য গ্রহণ কিংবা বলা হয় তাদের বেশভূষায় সাদৃশ্য গ্রহণ, আর এতটুকুই সাদৃশ্যের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং এখানে সংক্ষিপ্তভাবে সকলবিষয়ে নেককারদের অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। চুল রাখা কিংবা মুড়িয়ে ফেলা কিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবে না। বরং বদলা দেওয়া হবে নিয়ত ও আমলের বিপরীতে। কত চুল মুড়িয়ে ফেলা ব্যাক্তি আছে যারা চুলধারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ! আর কত চুলধারী মধ্যেও আছে কত নেককার লোক! ডান হাতে আংটি পরা একটি বৈধ ও উত্তম বিষয় ছিল। সালাফদের একটি দল ডান হাতে আংটি পরেছেন। কিন্তু যখন রাফেযি শিয়াদের মাঝে ডান হাতে আংটি পরার ব্যাপক প্রচলন ঘটে এবং অন্যদের সাথে এর মাধ্যমে তারা স্বাতন্ত্র অর্জন করে, তখন আলেমরা একে মাকরুহ বা অপছন্দনীয় বলেন। আর এই অপছন্দনীয়তা হল তাদের সাথে সাদৃশ্য তৈরি হবার কারণে, খোদ এই কাজটি হারাম কিংবা মাকরুহ হবার কারণে না। ওয়া বিল্লাহি-ত তাওফিক।"
মন্তব্য: ইমাম ইবনে আব্দুল বার এর আলোচনার মূল পয়েন্ট হল, পোশাক-আশাক ও বেশভুষার ক্ষেত্রে সমাজের মানুষের সাথে সঙ্গতি বজায় রাখা। লম্বা চুল রাখা যদি কোন সমাজে বখাটে ও উচ্ছৃঙ্খল পুরুষের চিহ্নে পরিণত হয়, তবে এমন সমাজে লম্বা চুল রাখা মাকরুহ সাব্যস্ত হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা কোন চূড়ান্ত হুকুম নয়, বরং স্থান-কালভেদে পরিবর্তনশীল একটি বিষয়।
উসুলি আলোচনা: নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কৃত কাজসমূহের বিধান।
ইমাম সুলাইমান আল-বাজি আল-মালিকি তার ইহকামুল ফুসুল গ্রন্থে বলেন,
والكلام هنا في الأفعال وهي تنقسم إلى قسمين :
أحدهما : ما يفعله نيانا لمجمل الكتاب والسنة فهذا حكمه حكم المبين في الوجوب والندب والإباحة .
والثاني : ما يفعله ابتداء وهو على ضربين :
أحدهما : ما لا قربة فيه نحو الأكل والشرب والمشي واللباس . فهذا يدل على الإباحة . وقد ذهب بعض أصحابنا إلى أنه على الندب كالمشي في نعلين والأكل في اليمين والابتداء في النتقل باليمين وغير ذلك . وهذا غير صحيح . لأن الندب إنما حصل في صفة الفعل لا في نفس الفعل . لإنه ليس بمندوب إلى الأكل فإذا أكل كان مأمورا بإيقاعه على هذا الوجه .
والضرب الثاني : ما فيه قربة وعبادة .
আমরা এখানে নবিজি কাজসমূহ নিয়ে কথা বলছি। একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমত - যা তিনি কিতাব-সুন্নাহতে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখিত কোন বিধানকে ব্যাখ্যা করার জন্য করে থাকেন। এমন ব্যাখ্যামূলক কাজের ক্ষেত্রে বিধান তাই হবে যা কিতাব-সুন্নাতের মূল বক্তব্যের বিধান। অর্থাৎ মূল বক্তব্য ওয়াজিব, মানদুব (মুস্তাহাব) নাকি মুবাহ তার ওপর নির্ভর করবে ব্যাখ্যামূলক কাজের বিধান কী হবে।
দ্বিতীয়ত - যা তিনি ব্যাখ্যা হিসেবে নয়, বরং নিজ থেকে সূচনা করেন। এটাও দুই প্রকার।
প্রথম প্রকার হল যা তিনি নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম (অর্থাৎ ইবাদত) হিসেবে করেন না যেমন খাওয়া-দাওয়া, হাঁটা-চলা, পোশাক-আশাক। এসব কাজের ক্ষেত্রে হুকুম হল এটা মুবাহ নির্দেশ করে। তবে আমাদের মাযহাবের কেউ কেউ একে মানদুব (মুস্তাহাব) আখ্যা দিয়েছেন এবং উদাহরণস্বরূপ দুই পায়ে জুতা পরা, ডান হাতে খাওয়া, যেকোন কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা ইত্যাদি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই বক্তব্য সঠিক নয়। কেননা এখানে মানদুব (মুস্তাহাব) বিধানটি খোদ সেই কাজের ওপর বর্তায় নি, বরং সেই কাজের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে এসেছে। কারণ খোদ খাওয়া-দাওয়া করা মানদুব (মুস্তাহাব) নয়, কিন্তু যখন কেউ খেতে বসবে তখন তাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে যেন সে এই পদ্ধতি (অর্থাৎ ডান হাত দিয়ে) খায়।
দ্বিতীয় প্রকার হল যা তিনি ইবাদত ও নৈকট্য অর্জনের মাধ্য হিসেবে করেন ...
মন্তব্য: ইমাম আল-বাজির এই আলোচনা থেকে বোঝা গেল যে, নবিজির সা. যেসব কাজ তিনি একজন মানুষ হিসেবে আচার-অভ্যাস বশত করেছেন তার বিধান হল এটা মুবাহ নির্দেশ করে। যেমন: খাওয়া-দাওয়া করা। কিন্তু যদি সেই আচার-অভ্যাস পালন করার বৈশিষ্ট্য ও পদ্ধতি সম্পর্কে নবিজির কোন সুনির্দিষ্ট আদেশ থাকে, তবে সেটা মুস্তাহাব নির্দেশ করে। যেমন: ডান হাতে খাওয়া। সুতরাং এই একই উসুল অনুযায়ী, নবিজি সা. এর দীর্ঘ চুল রাখার বিষয়টি মুবাহ হিসেবে ধর্তব্য হবে। কেননা তিনি এটি নিজে ব্যাক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী রাখতেন, কাউকে রাখতে আদেশ দিতেন না। কিন্তু চুল পরিপাটি করে রাখার হুকুম হবে মুস্তাহাব কেননা এটা করার ব্যাপারে নবিজির স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে।
আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
পড়লাম! বেশ কিছু ঘোলাটে ধারণা ক্লিয়ার হলো।