সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি -
لعن الله الواشمات والمستوشمات والنامصات والمتنمصات والمتفلجات للحسن المغيرات خلق الله
আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক সে নারীদের উপর যারা নিজেরা ট্যাটু (উল্কি) আঁকে, অন্যের গায়ে ট্যাটু করে, নিজ চোখের ভ্রু প্লাক করে, অন্যের চোখের ভ্রু প্লাক করে, যে নিজের দাঁত সোজা করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির খাতিরে, যারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃতিকারী। [বুখারি, মুসলিম]
অনেকেই আছেন যারা এই হাদিসের কারণে মেয়েদের ভ্রু প্লাক করা কিংবা brace লাগিয়ে দাঁতের পাটি সোজা করাকে হারাম বলেন। তারা যুক্তি হিসেবে এই হাদিসটি উত্থাপন করে। মূলত এটি হাদিসকে বোঝার ক্ষেত্রে তাদের দূর্বলতা ও ক্ষীনদৃষ্টির পরিচায়ক।
শায়খুল ইসলাম ইমাম তাহের ইবনে আশুর রাহিমাহুল্লাহ তার প্রসিদ্ধ তাফসির গ্রন্থ আত তাহরির ওয়াত তানভির এ বলেন,
فإنّ الختان من تغيير خلق الله ولكنّه لفوائد صحيّة، وكذلك حَلق الشعر لفائدة دفع بعض الأضرار، وتقليمُ الأظفار لفائدة تيسير العمل بالأيدي، وكذلك ثقب الآذان للنساء لوضع الأقراط والتزيّن وليس من تغيير خلق الله التصرّف في المخلوقات بما أذن الله فيه ولا ما يدخل في معنى الحسن وأمّا ما ورد في السنّة من لعن الواصلات والمتنمّصات والمتفلّجات للحسن فممّا أشكل تأويله. وأحسن تأويله أنّ الغرض منه النهي عن سمات كانت تعدّ من سمات العواهر في ذلك العهد، أو من سمات المشركات، وإلاّ فلو فرضنا هذه مَنهيًّا عنها لَما بلغ النهي إلى حدّ لَعن فاعلات ذلك. وملاك الأمر أن تغيير خلق الله إنّما يكون إنما إذا كان فيه حظّ من طاعة الشيطان، بأن يجعل علامة لِنحلة شيطانية، كما هو سياق الآية واتّصال الحديث بها.
আল্লাহর সৃষ্টিকৃত বিষয়ে এমন কোন পরিবর্তন নিয়ে আসা যার অনুমতি আল্লাহ দিয়েছেন তা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি হিসেবে পরিগণ্য না। একইভাবে সৌন্দর্যের দিক থেকে যে পরিবর্তন করা হয় তাও না।
খতনা করা একদিক থেকে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন। কিন্ত এতে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে। একইভাবে চুল কাটাতে অনেক উপকার আছে এবং এর দ্বারা অনেক ক্ষতি থেকে দূরে থাকা যায়। নখ কাটলে হাতের কাজ করা সহজ হয়। একইভাবে নারীদের কানের দুল বা অলংকার পরার জন্য কান বা নাক ফোঁটা করার বিষয়টি – এগুলো নিন্দিত বা নিষিদ্ধ না!
কিন্তু রাসুলের সুন্নাতে যা বর্ণিত হয়েছে (উপরোক্ত হাদিস) তার সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করা অনেকের কাছেই সমস্যাকর ঠেকে। এর সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা হল — রাসুলের এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ছিল সে সময়ের পতিতা চরিত্রহীনা কিংবা মুশরিক মহিলাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোর অনুকরণ করা থেকে নিষেধ করা। কারণ যদি নিষেধাজ্ঞার পেছনে এমন কোন উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে অভিশাপের মত কঠিন কথা হাদিসে থাকত না।
এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে যে, আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে বিকৃতি বলে বিবেচ্য হবে যদি কোন শয়তানি রীতি অনুকরণের কোন উপাদান এই কাজে থাকে, যেমন: শয়তানি সংস্কৃতির কোন বিশেষ আলামত গ্রহণ করা। আর আয়াত ও হাদিসটির প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা থেকেই এটাই প্রতীয়মান হয়।
সুত্র : তাফসিরুত তাহরির ওয়াত তানভির, ইবনে আশুর।
তার মানে উদ্দেশ্য যদি চরিত্রহীনা কিংবা মুশরিক মহিলাদের বৈশিষ্ট্যগুলোর অনুসরণ না করা হয়ে নিছক সৌন্দর্য্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে ভ্রু প্লাক করা বা ট্যাটু করা যাবে?